নিউজ সোনারগাঁ টুয়েন্টিফোর ডটকমঃ চারদিকে যমদূতের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে মরনঘাতী করোনা ভাইরাস। কে যে কখন আক্রান্ত হয় বলা মুশকিল। তবে প্রথম থেকেই বলা হচ্ছে একমাত্র সচেতনতাই পারে এ ভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে। কিন্তু মানুষকে যতই সচেতনতার কথা বলা হচ্ছে মানুষ ততই তা অমান্য করছেন। অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করা হলেও কেউ এর তোয়াক্কা করছেন না। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ তথা সোনারগাঁওয়ের মানুষ প্রশাসনের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেদের মর্জিমতো চলাফেরা করছেন। মানুষকে ঘরে থাকার উপকারিতা বুঝাতে বুঝাতে স্থানীয় প্রশাসন এখন অনেকটাই ক্লান্ত। এমনকি সোনারগাঁওয়ের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকাও এ পরিস্থিতিতে সোনারগাঁওয়ে লক ডাউন দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন। এখন দেখার পালা শেষ পর্যন্ত সোনারগাঁওকে লক ডাউন করা হয় কিনা? সরকার দেশবাসীকে প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করেছেন অথচ সোনারগাঁয়ের ক্ষেত্রে অনেকাংশেই এর বিপরীত চিত্র লক্ষ্য কারা যাচ্ছে। সোনারগাঁওয়ের একটি পৌরসভা ও দশটি ইউনিয়নের বিভিন্ন পাড়া মহল্লার চায়ের দোকানগুলোতে এখনো চলছে জমজমাট আড্ডা। হাট বাজারগুলোতে মানা হচ্ছে না শারীরিক দূরত্ব। কিশোর ও যুবারা দল বেঁধে মাঠে খেলাধূলা করছে। জায়গায় জায়গায় আড্ডা দিচ্ছেন নানা বয়সী মানুষ। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে করোনার ভয়াবহ চিত্র দেখেও বিন্দুমাত্র আমলে নিচ্ছেন না বিষয়টি। অথচ একটু অসাবধানতার জন্য পুরো উপজেলায় নেমে আসতে পারে ভয়াবহ বিপর্যয়। সোনারগাঁওয়ের অনেক সচেতন মহলও করোনার বিধি নিষেধ অমান্য করে চলছেন। বিশেষ করে বর্তমান দূর্যোগ মুহুর্তে যারা অসহায়দের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করছেন তাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব বেশী পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে যারা ত্রাণ নিতে আসছেন তাদেরকে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড় করানো হচ্ছে ঠিকই যারা দিচ্ছেন তারা গাদাগাদি করে দাঁড়াচ্ছেন। অথবা একটি ত্রাণের প্যাকেট একসাথে ধরছেন সাত আটজন মিলে। প্রশ্ন হচ্ছে এক সাথে এভাবে ত্রাণ বিতরণ কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত? কার হাতে করোনা ভাইরাস আছে কে জানে সুতরাং যারা এভাবে ত্রাণ দিচ্ছেন এবং এ ত্রাণ যারা নিচ্ছেন উভয় পক্ষই করোনা ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছেন। সুতরাং যারা ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের মতো মহৎ একটি কাজ করছেন তারা আরো একটু সচেতনতা অবলম্বন করলে নিজেও নিরাপদ থাকতে পারেন অপরকেও নিরাপদে রাখতে পারেন। সরকারি হিসেবে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৩ জন। জেলায় এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪ জন। আক্রান্ত হয়েছে ৩৫ জন। তারপর পরিক্ষার ঘাটতি রয়েছে অনেক। আরো লোককে পরিক্ষা করলে এর সংখ্যা হয়ত আরো বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশে আক্রান্তের দিক দিয়ে এ জেলা বর্তমানে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সোনারগাঁওয়ের মানুষ যদি এখনো সচেতন না হন তাহলে এর চরম খেসারত দিতে হবে। সোনারগাঁওয়ের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় নিজ নিজ উদ্যোগে চলাচলের রাস্তায় গাছের গুড়ি বাঁশ ফেলে বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। কোন যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। বলা হচ্ছে গ্রাম ভিত্তিক তারা লক ডাউন করছেন। এ বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও পক্ষে বিপক্ষে তর্ক চলছে। তবে যারা এভাবে চলাচলের সড়কগুলো বন্ধ করে দিচ্ছেন তারা অবশ্যই প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে বন্ধ করা উচিত। কারণ আপনার এলাকায় হঠাৎ কেউ অসুস্থ হতে পারেন, প্রসূতি মায়ের চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে, হঠাৎ আগুন লাগতে পারে, ডাকাতির ঘটনা ঘটতে পারে অথবা কেউ বাড়িতে রিক্সায় করে চাল ডাল কিংবা খাদ্য সামগ্রী নিয়ে আসতে পারেন সেক্ষেত্রে রাস্তা বন্ধ থাকলে এম্বুলেন্স, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় গাড়ি যেতে পারবে না। উল্টো মানুষ ভোগান্তির শিকার হবে। আর রাস্তা বন্ধ করে তো করোনা ঠোকানো যাবে না। এটা ঠেকাতে হলে ব্যক্তি পর্যায়ে প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে। সুতরাং সড়ক বন্ধ করা কোন সমাধান নয়।

করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে ছড়িয়ে পারার সাথে সাথে বিভিন্ন গুজবও ছড়িয়ে পড়ছে। সোনারগাঁওয়েও মুখরোচক নানা গুজব ভেসে বেড়াচ্ছে সুতরাং এসব গুজবে কান না দেয়ার জন্য সোনারগাঁওবাসীর প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। পরিশেষে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দিয়ে শেষ করছি। বর্তমান ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতে সবাই ঘরের ভেতরে অবস্থান করলেও সাংবাদিকরা কিন্তু জীবনের ঝঁকি নিয়ে বাইরে বের হয়ে সঠিক সংবাদ পৌঁছে দিচ্ছেন মানুষের কাছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে সোনারগাঁওয়ের অনেক সাংবাদিকই কোন ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়েই সংবাদ সংগ্রহের নামে বাইরে বের হচ্ছেন । মোটর সাইকেলে দুই তিনজন একসাথে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মানুষের সাথে অবাধে মিশছেন। তাদেরকে বলতে চাই নিজের সুরক্ষা আগে সংবাদ সংগ্রহ পরে। এভাবে অবাধ বিচরণ আপনার ও আপনার পরিবারসহ গোটা সমাজে ডেকে আনতে পারে মহাবিপদ। সুতরাং সাবধান হওয়ার এখনই সময়।

লেখকঃ সম্পাদক, চারদিক